আমি আর সোহেল ভাই (জাহিদ মাহমুদ) তখন এক সাথে বিজ্ঞাপন বানানোর কাজ করি। বড় একটা ক্লাইন্ট পেলাম, তার নাম বলবো না, সে যে-ই হোক সে ক্লাইন্ট। তার ছটা প্রেডাক্ট বাজারে আসবে। বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব নিয়ে গিয়ে হাজির আমরা। বেশ কিছু কর্মব্যাস্ত লোক সে অফিসে দেখে এসেছি সব সময়, তবে মালিক ভদ্রলোক নিজেই সব, সে আমাদের নিয়ে যাওয়া স্ক্রিপ্ট দেখে দেখে প্রসংশা করে শেষে বলে, ‘দেখেন না, আরো একটু ভালো কিছু করা যায় কি না।‘ প্রতিবার আমরা নতুন নতুন স্ক্রিপ্ট নিয়ে যাই আর সে ভদ্রলোক হেসে হেসে প্রসংশা করে আবার বলেন, আর একটু যদি…! এই ভাবেই চলছে মাস দুয়েক। সে এক সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা। বিরক্তি প্রকাশ করতেও পারছি না অনেকগুলো কাজ একসাথে।
তখন, গুগল-ইউ টিউব ছিল না, মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের নাম-গন্ধ নেই। সিডি, ডিভিডি, এমপিথ্রি, এমপিফোর এ সবের যুগ সেটা নয়। ভিসিপি-ভিসিআরের যুগ সেটা। ভারত থেকে কিছু বিজ্ঞাপনের ভিডিও ক্যাসেট বেরোতো।
সোহেল ভাইয়ের বাসায় বিজ্ঞাপনের ভিডিওগুলো দেখতাম আর সেখান থেকে আইডিয়া নেওয়ার চেষ্টা করতাম। এই ভাবে অনেকবার রিওয়াইন্ড ফরোয়ার্ড করে করে দেখতে হতো ক্যাসেট গুলো। ফলে এক দিন ভিসিআরের হেড নষ্ট হগয়ে গেলো। আবার নতুন হেড কিনে লাগাতে হবে। ব্যাপারটা যথেষ্ট ব্যায় সাপেক্ষ।
পরের দিন আবারো আমরা কয়েকটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে গেলাম। অনেক আলাপ আলোচনার পর ভদ্রলোক সেদিন বললেন, ‘এইতো হয়ে এসেছে, আর একটু মাথা খাটান …‘ আমি সঙ্গে সঙ্গে বিরক্ত হয়ে বলে উঠলাম, ‘আর কত মাথা খাটাবো ভাই, মাথা খাটাতে খাটাতেতো ভিসিআরের হেডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।‘ ভদ্রলোক অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, ‘কী?‘ সোহেল ভাই কথাটা ধরলেন। ‘না আসলে মানুষের মাথাটাওতো ভিসিআরের হেডের মতোই। তাই খোকন ভাই বলছে রাত-দিন আপনার স্ক্রিপ্ট চিন্তা করতে কেরতেই তো আমাদের মাথাও এক দিন ….
থ্যাংক ইউ সোহেল ভাই।
শেষ মেষ কাজটা আমরা পেয়েছিলাম, টাকাও পেয়েছিলাম। তবে সে ছটা পণ্য বাজারে আসে নি কোনো দিন।
Image by Jill Wellington from Pixabay